মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসার আহ্বান এফবিসিসিআই সভাপতি জনাব মোঃ জসিম উদ্দিনের
২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ তারিখে নিউইয়র্কে আমেরিকান বাংলাদেশী বিজনেস অ্যালায়েন্স আয়োজিত বার্ষিক বিজনেস সামিট-এ এ আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে, বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে দুই দেশের ব্যবসায়ীক যোগাযোগকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেন তিনি।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই বছরটি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সিডিপি প্রদত্ত এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সবগুলো লক্ষ্যমাত্রা সন্তোষজনকভাবে অর্জন করেছে বাংলাদেশ, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে ডিজিটালাইজেশন, শিল্পায়ন, ট্যুরিজম ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন বিশ্বের নতুন আশা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে, এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত সম্প্রসারণশীল অর্থনীতির দেশ। এমনকি করোনা মহামারী চলাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে আমরা ৫.৪৭% জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখযোগ্য।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, করোনা মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ এবং পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে দেশের রপ্তানি, সিএমএসএমই, কৃষিসহ অন্যান্য খাতকে অন্তর্ভূক্তকরণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে মেগা প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, এরইমধ্যে মহাসড়কগুলো চার লেনে উন্নীত হয়েছে। দক্ষ জনশক্তি তৈরি এবং উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এসএমই খাতের উন্নয়নে তৈরি হচ্ছে খাতভিত্তিক ক্লাস্টার জোন এবং হাইটেক পার্ক। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হলে অল্প সময়ের মধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের সুষম এবং সর্বোচ্চ ব্যবহার সম্ভব হবে। উন্মোচিত হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের দ্বার। ফলে সরকারের সকল উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে শিল্পখাতের তথা এসএমই খাতে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
নির্মাণাধীন কর্ণফুলী আন্ডার ওয়াটার টানেল চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার এর মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি, শিল্প সম্প্রসারণ, আমদানি এবং রপ্তানি বৃদ্ধিসহ ট্যুরিজম খাতে বিনিয়োগের বিশাল সম্ভাবনা দেখা দেবে। অত্যাধুনিকভাবে নির্মিত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের থার্ড টার্মিনালের কাজ বাস্তবায়িত হলে বাৎসরিক প্যাসেঞ্জার এবং কার্গো ধারণ ক্ষমতা দুটোই বাড়বে । যার ফলে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ হবে একটি উত্তম বিনিয়োগ স্থান।
তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু এবং বহুমুখী স্বার্থ উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার। আমাদের অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষা উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তাদের অবদান রয়েছে। এ সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে, মার্কিন ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। দুই দেশের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সভা, সেমিনার এবং বাণিজ্য মেলা এবং বিজনেস নেটওয়ার্কিং-এর জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম চালুর আগ্রহ প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, নির্মাণসহ অর্থনীতির প্রত্যেকটি খাতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রেমিটেন্স-এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা এবং শ্রমিকের নিরাপত্তা, নিরাপদ বহির্গমন নীতিমালা উন্নয়নসহ বিভিন্ন বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে বিভিন্ন দেশে শ্রমবাজার সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে।
অ্যানুয়াল বিজনেস সামিটে এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা কঠোর পরিশ্রম করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখছেন। তিনি আমেরিকায় প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। এসময় প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী এবং এফবিসিসিআই-এর মধ্যে নিয়মিত বাণিজ্য প্রতিনিধি বিনিময় এবং যোগাযোগের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। খাতভিত্তিক সমস্যা ও সম্ভাবনা চিহ্নিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে এফবিসিসিআই ও আমেরিকান বাংলাদেশী বিজনেস এ্যালায়েন্স যৌথভাবে কাজ করতে পারে বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি জনাব মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু।
আমেরিকান বাংলাদেশী বিজনেস এ্যালায়েন্স (এবিবিএ) আয়োজিত অ্যানুয়াল বিজনেস সামিট এ অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ সভাপতি জনাব ফারুক হাসান ও এফবিসিসিআই’র পরিচালক জনাব আমজাদ হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবিবিএ’র সভাপতি জনাব এ কে এম ফজলুল হক।
বিজনেস সামিটে আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি জনাব আমিনুল হক শামীম, জনাব সালাহউদ্দিন আলমগীর, জনাব এম এ রাজ্জাক খান, এফবিসিসিআই-এর পরিচালক জনাব মোঃ আনোয়ার সাদাত সরকার, জনাব রাশেদুল হোসেন চৌধুরী (রনি), জনাব রেজাউল করিম রেজনু, জনাব বজলুর রহমান, জনাব তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু, জনাব মোঃ নাসের, সৈয়দ সাদাত আলমাস কবির, জনাব আবুল কাশেম খান প্রমুখ।
