Accelerating the Trillion Dollar Journey

THE FEDERATION OF BANGLADESH CHAMBERS OF COMMERCE & INDUSTRY

Accelerating the Trillion Dollar Journey

এফবিসিসিআই এর সেমিনার পরিকল্পিত শিল্প নগরিতে কলকারখানা স্থাপনের তাগিদ জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর

আগস্ট ৫, ২০২৩: শিল্পে বিদ্যমান জ্বালানি সংকট থেকে দ্রুত উত্তরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বহুমুখী জ্বালানি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। যার আওতায় রয়েছে নতুন নতুন কূপ খনন, বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন, তেল আমদানির জন্য সিঙ্গেল মুরিং পাইপলাইন স্থাপনসহ নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন বৃদ্ধি।

শনিবার (৫ আগস্ট, ২০২৩) সকালে এফবিসিসিআই আয়োজিত ’বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার: বঙ্গবন্ধুর দর্শন’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

তিনি বলেন, ”২০০৯ সালের নির্বাচনে বর্তমান সরকারের ইশতেহার ছিল ২০২১ সালের মধ্যে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া। সেই লক্ষ্য অর্জনের পর, এখন সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’ গৃহস্থালি এবং শিল্পের জন্য সূলভমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

সরকারের এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে উদ্যোক্তাদের পরিকল্পিত শিল্প নগরিতে কলকারখানা ও শিল্প স্থাপনের আহ্বান জানান নসরুল হামিদ। যত্রতত্র শিল্প স্থাপনের কারণে দেশে গ্যাসে প্রচুর অপব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আপনারা সরকারের পরিকল্পিত শিল্প নগরিতে কলকারখানা স্থাপন করুন, সেখানে নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহের দায়িত্ব আমাদের।’

আগে দেশে তেল সংরক্ষণ সক্ষমতা মাত্র ৩০ দিন থাকলেও বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে ৪৫ দিনে উন্নীত করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অল্প কিছু দিনের মধ্যে বাংলাদেশের তেল সংরক্ষণ সক্ষমতা ৯০ দিনে (৩ মাস) উন্নীত করা হবে।

বায়োগ্যাস উৎপাদনে বাংলাদেশের বড় সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেসরকারি খাত বায়োগ্যাস উৎপাদনে আগ্রহ দেখালে সকল ধরনের সহযোগিতা করবে টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা)।

এর আগে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মো: জসিম উদ্দিন বলেন, “চলমান বৈশ্বিক সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জ্বালানি খাত। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ এটি। জ্বালানির দাম বাড়ায় বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়ছে স্থানীয় উদ্যোক্তারা।” এমন পরিস্থিতিতে, জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে স্থানীয় গ্যাস, কয়লা ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি।

সরকারের প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর নাগাদ প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা দাঁড়াবে দৈনিক ৫ হাজার ৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট। যা বর্তমান চাহিদার চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। দেশে গ্যাসের মজুদ কমে আসা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের সাথে এর বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য ইতোমধ্যে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। তবে বর্তমানের ন্যায় কেবল আমদানি নির্ভর থাকলে ২০৩০ সাল নাগাদ শুধুমাত্র জ্বালানি আমদানীতে ব্যয় হবে ২৪ থেকে ৩০ বিলিয়ন ডলার। এমতাবস্থায়, তেল ও গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে বিকল্প হিসেবে কয়লা এবং নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে তৎপর হতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি।

তিনি বলেন, ভিন্নভিন্ন উৎস বিশেষ করে জল এবং স্থলভাগ থেকে অভ্যান্তরীণ জ্বালানি প্রাপ্তির সম্ভাব্যতা বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে আমরা ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া এবং কম্বোডিয়ার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারি।

এফবিসিসিআই এর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, “রংপুর অঞ্চলে যেসব কয়লা খনির সন্ধান মিলেছে সেগুলো থেকে কয়লা উত্তোলনে সরকারকে রাজনৈতিকভাবে সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে খনি সংলগ্ন এলাকার জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ব্যবস্থা করে সেখানে বৃহৎ আকারে কয়লা উত্তোলনে (ম্যাসিভ মাইনিং)যেতে হবে। এতে করে দেশের জ্বালানি সংকটের চাপ কিছুটা কমবে।”

সেমিনারে অংশ নিয়ে, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের চলমান কার্যক্রম ও পরিকল্পনার তথ্য তুলে ধরেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ড. মো: খায়েরুজ্জামান মজুমদার এবং বাংলাদেশ পেট্রোলিয়ম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: শোয়েব। সেমিনারে বাংলাদেশের জ্বালানি সম্ভাবনা ও করণীয় বিষয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল ঈমাম।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি মো: আমিন হেলালী, পরিচালকবৃন্দ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো: সামির সাত্তার, বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল আজিজ পাটোয়ারীসহ জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

ধন্যবাদান্তে,

তানজিদ বসুনিয়া
হেড অব পিআর অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, এফবিসিসিআই।